Electric Bill New Rule: প্রতি দিন আমরা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করি তার উপর হিসেব করে তিন মাস পর একটি বিদ্যুৎ বিল আসে। এই নিয়ম এতদিন চলে আসছে। তবে আর কিছু দিনের মধ্যে বাড়ির বিদ্যুতের বিল নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলে যাচ্ছে। ডে অ্যান্ড নাইট ডাইভার্সিফায়েড (Day and Night Diversified) পদ্ধতি তে আগামী দিনে বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ হবে। অথাৎ দিনের বেলায় বিদ্যুৎ খরচের মূল্য প্রতি ইউনিট কমে যাবে আর সূর্য অস্ত গেলে ইউনিটের মূল্য বেড়ে যাবে।
আপনি কি বুঝতে পারলেন নতুন বিদ্যুৎ বিলের নিয়ম। সহজ ভাবে বলি। ধরুন রাম প্রতি মাসে ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাহলে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী রামকে ১০০×৭=৭০০ টাকা (১ইউনিট= ৭ টাকা, পশ্চিমবঙ্গ) বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। আর নতুন নিয়ম অনুযায়ী ধরুন রাম প্রতি মাসে ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। দিনে ৩০ ইউনিট আর রাতে ৭০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তাহলে নতুন নিয়ম অনুযায়ী রামকে ৩০×৫= ১৫০ টাকা (দিনে ব্যবহিত বিদ্যুৎ) ৭০×৯=৬৩০ টাকা (রাতে ব্যবহিত বিদ্যুৎ) মোট ১৫০+৬৩০= ৭৮০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে। অথ্যাৎ নতুন নিয়মে দিনের ব্যবহিত বিদ্যুৎ দাম প্রতি ইউনিট ২০% কমে যাবে। অপরদিকে রাতের বেলা বিদ্যুৎ দাম প্রতি ইউনিট ২০% বেড়ে যাবে।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ মন্ত্রক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী দিনে এই নিয়মে বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ করা হবে। গোটা বিষয়টা দেখে একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই নিয়মের ফলে আপনার মাসিক বিদ্যুতের খরচ বর্তমান সময়ের থেকে বাড়তে চলেছে। কারণ দিনের বেলায় বহু বাড়িতে টিউবলাইট বা অন্য কোনও বৈদ্যুতিন আলো জ্বালার দরকার পড়ে না। কিন্তু সূর্য অস্ত গেলেই বাড়িতে বৈদ্যুতিন আলো জ্বালা ছাড়া দেখার কোনও উপায় নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে অনেকেই জনবিরোধী বলে দেগে দেবেন। কারণ এতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমস্যা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কেন্দ্রের এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কতগুলি বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। জেনেনিন!
বেশি ভাগ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস হলো জীবাশ্ম জ্বালানি। এখান থেকে উৎপন্ন হয় প্রচুর পরিমাণ কার্বন। এই পৃথিবীকে বাঁচাতে, পরিবেশকে রক্ষা করতে কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে তারা যত দ্রুত সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করবে। এই বিশ্বকে বাঁচাতে ভারতবর্ষ’ও সেই দিকে হাঁটছে।
প্রত্যেকে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য সরকার বার বার বার্তা দিয়েছেন। তবে খুব একটা কাজ হয়নি। সৌর বিদ্যুৎ পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব। সেই কারণেই সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে মানুষকে আরও বেশি করে উৎসাহী করে তুলতে দিনের বেলায় বিদ্যুতের মাশুল বর্তমান সময়ের থেকে ২০% কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আবার সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার কমে যায়। তখন চিরাচরিত কয়লা থেকে উৎপন্ন তাপ বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয়। যা জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা থেকে উৎপন্ন হয়। আমজনতা যাতে তাপ বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত বোধ করে সেই কারণেই সন্ধ্যের পর বর্তমান সময়ের থেকে বিদ্যুতের মাশুল ২০% বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই নতুন নিয়মে সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং পরিবেশ কে রক্ষা করা যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ৬৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের মাশুলের হেরফেরের এই বিষয়টি তারই অংশ। তাতে ধীরে ধীরে তাপ বিদ্যুতের ব্যবহার কমবে।
২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে শিল্পক্ষেত্রে দিনেরবেলায় একরকম বিদ্যুতের মাশুল এবং রাতে তার থেকে বেশি মাশুলের এই নিয়ম চালু হবে। ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে গৃহস্থ বাড়িতেও এই নিয়ম লাগু হবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ মশুলের হেরফেরের এই নিয়মেও অন্তর্গত হতে হবে। কেবলমাত্র কৃষি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মাশুলের বৃদ্ধি ঘটানো হবে না। কোনো সংস্থা বা সাধারণ মানুষ যদি এই নতুন নিয়ম মানতে না চাই তাহলে সে বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত থাকবে তার সঙ্গে জরিমানা করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক।